কক্সবাজার প্রতিনিধি :
শুক্রবার থেকে টানা ছয় দিন সরকারি বন্ধ। এর মধ্যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ অথবা ৩ মে ঈদুলফিতর উদযাপিত হবে। রোববার মে দিবসের বন্ধ। সব মিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি।
এরপর বৃহস্পতিবার একদিন খোলার পর আবার দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুলফিতরের ছুটির সঙ্গে সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা নয় দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ।
বৃহস্পতিবার বিকালে সপ্তাহিক ছুটিতে বাড়ি যাওয়া চাকরিজীবিরা ফিরবেন ৮ মে। এ সময়ে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।
তবে অন্য সময়ের মতো আগাম বুকিংয়ের তোড়জোড় নেই বলে জানান তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপণন নির্বাহী ইমতিয়াজ সুমেল।
তিনি বলেন, টানা ৯ দিনের ছুটি থাকলেও ৪-৬ মে বুকিং হয়েছে। হোটেল-মোটেল জোনের প্রায় তারকা হোটেলে একই অবস্থা। অথচ অন্য সময়ে তিন থেকে পাঁচ দিন বন্ধ পড়লেও বুকিংয়ের ফোন রিসিভ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠতে হতো। এখন সেই ব্যস্ততা নেই।
একই কথা বললেন সী নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজীও। তিনি বলেন, মৌসুমে এমন বন্ধ পড়লে গ্রুপ এবং ইনডিভিজুয়াল বুকিং হতো গেস্ট হাউজগুলোয়। অতিরিক্ত গরমের কারণে এ ছুটিতে সেই চাপ নেই বললে চলে, যা কল আসছে তা স্বাভাবিক। এরপরও ধারণা করা যায়, ৪-৭ মে পর্যন্ত লাখো পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করবেন।
সেই আশায় পর্যটক বরণে তৈরি হচ্ছে পর্যটন নগরীর আবাসান ও খাবারের ঘরগুলো। চলছে হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। এক মাস সময় পেয়ে অনেক হোটেল সংস্কার কাজও সেরে নিয়েছে। তারাও ঈদের পর পর্যটক সেবা দিতে তৈরি হয়েছে।
প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-হকাররাও। মাস দেড়েক সুনসান নীরবতায় থাকা সৈকতজুড়ে কোলাহলমুখর পরিবেশের আশায় সবার যেন পূর্বপ্রস্তুতি এখন কক্সবাজারজুড়ে। ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে দেড় লাখের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
ইতোমধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। টানা বন্ধে কয়েকদিন একটু বেশি চাপ থাকবে। অন্য দিনগুলোয়ও পর্যটক উপস্থিতি মোটামুটি থাকবে আশা করা যায়। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক আসবে-এমনটি ধরে নিয়ে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি, ঈদের আগে আগাম বুকিং আরও বাড়বে। পর্যটকরা অনলাইন বা মোবাইল ফোনে বুকিং দিয়ে এলেই সবচেয়ে ভালো। আরও বলেন, বৈশাখে একটু গরম বেশি। কিন্তু মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হলে গরমের তীব্রতা কমে। ঈদেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখেছি। তেমনটি হলে তা পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য হবে রহমতের বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ঠান্ডায় পর্যটকরা আরামে ঘুরতে পারেন।
কলাতলীর স্বাধীন বাংলা রেস্তোরাঁর পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, রমজানে কক্সবাজার পর্যটকশূন্য ছিল বলা চলে। এ সময় রেস্তোরাঁর কিছু ডেকোরেশন ও রঙের কাজ করা হয়েছে। অন্যরাও হোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টগুলো পরিষ্কার-পরিছন্নতা এবং সৌন্দর্যবর্ধন কাজ চালাচ্ছে। সবাই রেস্তোরাঁগুলো কমবেশি সাজাচ্ছে।
সৈকতের বালিয়াড়ির কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, মার্চের শেষ সময় থেকে কক্সবাজার পর্যটকশূন্য থাকায় মাস দেড়েক কর্মচারীর বেতনও জোগাড় করতে পারিনি। ঈদের ছুটিতে পর্যটক আগমন বাড়লে ব্যবসা ভালো হওয়ার আশা করছি।
জেলা পরিষদের ছাতা মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের জন্য দোকান গোছাতে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকাররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সৈকত এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে, সেটি বিবেচনায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের জন্য খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঈদে টানা ছুটি পড়েছে; কিন্তু গরমও পড়ছে বেশি। এরপরও পর্যটক সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটকসংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করেছি, যেন পর্যটকরা ভালো সেবা পায়। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে এবং আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবেন।
পহেলা বৈশাখে পর্যটন মৌসুম থাকে। এ সময় পর্যটন জোনে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ করা হয়। তখনও পর্যটকে ভরে থাকে কক্সবাজার। কিন্তু চলতি সময়ে ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। ফলে এবারের পর্যটন মৌসুম শেষ হয়েছে মার্চে।
একদিকে রমজান, অপরদিকে তীব্র দাবদাহে পর্যটকশূন্যতায় রয়েছে কক্সবাজার। এতে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটকনির্ভর ব্যবসাবাণিজ্যে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। সামনে আসছে বর্ষাকাল। তাই আগামী পর্যটন মৌসুম পর্যন্ত কক্সবাজার লোকারণ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত দুই বছর করোনার কারণে দুই ঈদুলফিতর ও আজহার ঈদও ছিল বিধিনিষেধের আওতায়। করোনা-পরবর্তী এবারের ঈদে বালুচর ও কক্সবাজার লোকারণ্য থাকবে সেই আশা সবার।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-